এদেশের তরুণ প্রজন্মের বেশকিছু উদ্ভাবন বিভিন্ন সময়ে সারাবিশ্বে চমক জাগাতে সক্ষম হয়েছে। তবে অসাধারণ মেধাবী এ তরুণদের প্রতিভা বিকাশে বড় বাধা হিসেবে আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়টা প্রায়ই উঠে আসে।
সম্প্রতি এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে সরকারি মালিকানাধীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) অধীন এ কোম্পানিটি প্রথম দফায় সাতটি দেশীয় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এতে দেশের একমাত্র ই-লার্নিং স্টার্টআপ হিসেবে বিনিয়োগ পাচ্ছে ‘এডুহাইভ’।
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড ‘শতবর্ষে শত আশা’ শিরোনামে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ বিনিয়োগ ঘোষণা ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষাকে সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও হাতের মুঠোয় পৌঁছানোর যে মহান লক্ষ্যে এডুহাইভ কাজ করছে, তা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। এ দেশে শিক্ষার্থীদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে সুশিক্ষার সমান সুযোগ না পাওয়া এবং শিক্ষার উচ্চ ব্যয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার খরচের প্রায় শতকরা ২৯ ভাগই প্রাইভেট টিউশনের জন্য ব্যয় হয়। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক কারণেই শহরাঞ্চলের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করে চলেছে এই প্ল্যাটফর্ম।
প্রায় ১৭ বছরের শিক্ষকতা ও দেশের তিনটি সফল স্টার্টআপে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে মোঃ নাজমুল হক সরকার ও তার তিন সহ-প্রতিষ্ঠাতার উদ্যোগে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এডুহাইভ। মূলত এডুহাইভ অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক একটি অ্যাপ। এটি দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। ফলে একজন শিক্ষার্থী ঘরে বসেই সহজেই ঐ সব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের সেবাসমূহ তথা বিষয়ভিত্তিক কোর্সের লেকচার, শিক্ষা সহায়িকা ও যাবতীয় কন্টেন্টগুলো পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। আর দেশের সকল প্রান্তের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পাবে মানসম্পন্ন শিক্ষার সমান সুযোগ।
প্রথম দফায় এডুহাইভে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মো. নাজমুল হক সরকার। এ সহায়তা এডুহাইভকে বিশ্বের সবচেয়ে সৃজনশীল শিখন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ বিনিয়োগের ফলে দেশে একটি জাতীয় উদ্যোক্তা প্লাটফর্ম তৈরি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন বাস্তবায়নে গতি সঞ্চার করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া সফল উদ্যোগগুলোর পাশাপাশি যাদের ভালো আইডিয়া আছে কিন্তু অসফল, তাদেরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা।
এডুহাইভ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ‘এডুহাইভ স্কলার্স’ নামক অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রামের আয়োজন করে। এতে সারাদেশ থেকে ২৮৬ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রায় ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৃত্তি দেয়া হয়। করোনায় সংসদ টিভিতে গত ৯ আগস্ট থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্পে ছয় শতাধিক ক্লাস সরাসরি নিজেরা পরিচালনা করেছে। এতে শিক্ষক থেকে শুরু করে ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা, প্রসেসিং ইত্যাদি বেশিরভাগ কাজগুলোই তারা নিজেদের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করেছে।
বর্তমানে এডুহাইভের নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লক্ষ চল্লিশ সহস্রাধিক। পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য এখানে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের দেড় লক্ষাধিক প্রশ্ন এবং যথেষ্ট পরিমাণে ভিডিও ক্লাস রয়েছে। প্রতি মাসে নতুন নতুন ক্লাস যোগ করা হচ্ছে। করোনায় পড়াশোনা সহজ করতে নবম-দ্বাদশ শ্রেণীতে সকল মডেল টেস্ট এবং অনলাইন লেসন ফ্রি করে দিয়েছিল তারা।
সার্বিক বিষয়ে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিনা এফ জাবিন বলেন, ‘এটি আমাদের প্রথম বিনিয়োগ। তরুণদের বিভিন্ন উদ্যোগকে আমরা সহায়তা করে যাবো।’ ২০১৯ সালে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের অনুমোদন দেয় সরকার। এর মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। এখান থেকে এ বছর ৫০ জন উদ্যোক্তাকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে।